হাতকড়া-শিকল পরিয়ে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : ০৫-০৯-২০২৫ ১৯:২৭

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে তাদের বহনকারী একটি বিশেষ বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। পরে রাত ২টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রানওয়ে থেকে শিকল খুলে অ্যারাইভাল গেটে নেওয়া হয়। এ সময় কাউকে তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। কাউকে কোনো ধরনের ছবিও তুলতে দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন।
ইমিগ্রেশনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, রাত ১১টার পরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তিন ঘণ্টা বিমানটি রানওয়েতে ছিল। রাত ২টার দিকে আরোহীদের হাতকড়া ও শিকল খুলে দেওয়া হয়। পরে তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়ায় নেওয়া হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিম এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় একাধিক দফায় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এর আগে আরো কয়েক দফায় বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশির ফেরত আসার তথ্য জানা গেছে।
অভিবাসীদের এভাবে হাতকড়া বা শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ অভিবাসী হতে চাইবেন, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একই সঙ্গে গন্তব্য দেশ চাইলে তাদের ফিরিয়েও দিতে পারে। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে প্রত্যাবাসন করলে মানবিক দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবে।
মার্কিন আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। যাদেরকে ফেরত পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসব বাংলাদেশি মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। বাংলাদেশিরা জনপ্রতি ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত দালালদের পেছনে খরচ করে তারা।
প্রথম দিকে হাতকড়া ও শিকল পরানো না হলেও গত ২ আগস্ট একটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭-এ করে নারীসহ যে ৩৯ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানো হয়, তাদের সবার হাতকড়া ও শিকল ছিল।
এর আগে চলতি বছরের ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরো অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। ২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ১৮০ ছাড়িয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে ২৭ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে। তারা বিশেষ ফ্লাইটে এসেছিলেন, আর যাত্রাপথে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এই দৃশ্য তখন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এভাবে শিকল পরানোয় মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com