দাবি ও আন্দোলনে তীব্র যানজট, ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ
প্রকাশ : ১৫-০৫-২০২৫ ১৫:০৮

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিক্ষোভকারীরা। তিন দফা দাবিতে বুধবার (১৪ মে) থেকে টানা আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবারও (১৫ মে) আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করছেন। এতে করে এ মোড় সংশ্লিষ্ট সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে।
অন্যদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতেও দুদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিক্ষোভকারীরা। আজও তারা সড়কে আছেন। ফলে গুলিস্থান মাজারের দিক থেকে বঙ্গবাজারের দিকের সড়কের দুইপাশে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আজকে ঢাকার দুই জায়গায় এমন অবস্থানের কারণে নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় চাপ পড়েছে। ভেঙে পড়েছে পুরো কাঠামো। দুর্ভোগে পড়েছেন জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষসহ অফিসগামীরা। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন। এমনিতেই বৃহস্পতিবার মানে ঢাকা শহরে যানবাহনের বাড়তি চাপ যানজট ভোগান্তি থাকে। তার মধ্যে ঢাকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে।
কাকরাইল সড়কে যান চলাচল বন্ধ বুধবার থেকেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে বুধবার বিকালে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও আজ আবার অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সকাল ১০টা থেকে সরেজমিনে ও বিভিন্ন সড়কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল মোড়, গুলিস্তান, মতিঝিলজুড়ে কোথাও তীব্র যানজট আবার কোথাও গাড়ির চাপ অনেক। অনেক স্থানের যাত্রীদের গণপরিবহন থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হেঁটে যেতে দেখা যায়।
গুলিস্তানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আহসান হাবিব। ভোগান্তি ভেবেই মিরপুর থেকে মোটরসাইকেল রেখে মেট্রোরেলে রওনা দেন অফিসের উদ্দেশ্যে। সচিবালয় মেট্রো স্টেশনে নামার পর রিকশা নেন। তাতেই যেন বাধে বিপত্তি। সামনে যে সড়ক বন্ধ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে আন্দোলন অবরোধে সড়ক বন্ধ যান চলাচল। আধাঘণ্টায়ও কূলকিনারা না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছে রাজধানীতে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
সড়কে বাসে ভোগান্তিতে পড়া আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বিজয় সরণি মোড়ে নেমে হেঁটে রাস্তা পার হন। এরপর সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন। তিনি বলেন, চারদিকে খারাপ অবস্থা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাবো। তাই বাস ছেড়ে সিএনজি অটোরিকশায় উঠতে বাধ্য হলাম। গুগল ম্যাপ বলছে নিউ মার্কেট সড়ক অনেকটা ক্লিয়ার।
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে মগবাজার থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বিপাকে পড়েন বাসযাত্রী মিরাজ হোসেন। তিনি বলেন, বাস চলছেই না। কাকরাইল সড়ক বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটে সেগুনবাগিচায় আসি। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাব মোড় থেকে রিকশা নিয়ে রওনা দিই গন্তব্যে। সিদ্দিকবাজার মোড়ে আসতেই দেখি গুলিস্তান সড়কও বন্ধ। বাধ্য হয়ে রিকশা ছেড়ে আরো হাঁটা পথ ধরতে হয়েছে।
সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে ফুলবাড়িয়া এলাকায় অটোরিকশায় আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে তাহমিনা সালমা নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবীর। তিনি বলেন, সড়কের মাঝে মাঝে অবরোধ করে বন্ধ রাখা হয়েছে সড়ক। রিকশা চলার মতো রাস্তাও ফাঁকা নেই। অনেক মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যানজটের বিষয়ে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার মানেই বাড়তি চাপ। এদিন এমনিতেই সড়কে তীব্র চাপ তৈরি হয়। তারমধ্যে আজও গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্থানে সড়কে যান চলাচল বন্ধ। এ কারণে সড়কে সকাল থেকেই চাপ। সে চাপ অধিকাংশ স্থানে যানজট তৈরি করেছে। অফিসগামীযাত্রী, পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইভারশন করা হয়েছে। গুলিস্তান মতিঝিল গন্তব্য হলে নীলক্ষেত নিউমার্কেট সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানান তিনি।
ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলামোটর-হেয়ার রোড দিয়ে ডাইভারশন করা হয়েছে। কাকরাইলের সড়ক ক্লিয়ার করতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শুনছেন না বরং তাদের সংখ্যা বাড়ছে। যানজট ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসীকে বিকল্প সড়ক ও ডাইভারশন মেনে চলাচল অনুরোধ করা হচ্ছে।
তেজগাঁওয়ের সড়কের অবস্থা জানতে চাইলে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কাকরাইলে অবস্থান নিয়েছে জবি শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গুলিস্তানেও সড়ক বন্ধ। এর চাপ পড়েছে তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন সড়কে। সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com