নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে সংঘর্ষ, গুলিতে শ্রমিক নিহত
প্রকাশ : ০২-০৯-২০২৫ ১৬:২৩

ছবি : সংগৃহীত
নীলফামারী প্রতিনিধি
নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন শ্রমিক নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকের নাম হাবিবুর রহমান (২০)। তিনি ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি নিটিং কারখানায় কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়ের কাজীরহাট গ্রামে। তার বাবার নাম দুলাল উদ্দিন।
হাবিবুর রহমানের বড় ভাই আশিকুর রহমান বলেন, ‘হাবিবুরের কারখানায় নাইট ডিউটি ছিল। কাজ শেষে আজ সকালে ইপিজেড থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।’
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইপিজেডের এভারগ্রিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ নিয়ে সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এভারগ্রিন কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে ইপিজেডের প্রধান ফটকে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।
আজ সকাল আটটায় কাজে যোগ দিতে গিয়ে এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিকেরা ওই নোটিশ দেখতে পান। ভেতরে ঢুকতে না পেরে তারা ইপিজেডের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের সরিয়ে দিতে যান। তখন উত্তেজিত শ্রমিকেরা তাদের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। শ্রমিক হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন আরো ১০ জন। পরে হতাহত শ্রমিকদের নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারহান তানভিরুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে হাবিবুর রহমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত ছয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার বিষয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।
হাসপাতালে ভর্তি ছয়জন হলেন মোমিনুর রহমান (২৫), মো. শাহিন (২৬), নুর আলম (৩০), মোস্তাক আহমেদ (২৫), লিপি আক্তার (২৬) ও জমিলা খাতুন (৩৫)।
এদিকে শ্রমিকরা ২০ দফা দাবি তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে দেওয়া, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র সমস্যাকে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত না করা।
শ্রমিক সোহাগ হোসেন বলেন, আমরা টানা চার দিন শান্তিপূর্ণভাবে দাবি তুলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা করেনি। উল্টো কারখানা বন্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।
ইপিজেডের ভেনচুরা কারখানার সুপারভাইজার ও প্রত্যক্ষদর্শী মিলন বলেন, এখানে সমস্যা এভারগ্রিনের না, সমস্যাটা হচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা)। কারণ, কোম্পানি চালায় বেপজা। ইপিজেডের ভেতরের ১৬টি কোম্পানি আছে, তা একই নিয়মে চলতে হবে। কিন্তু এভারগ্রিন তার উল্টোটা করে। তার মানে বেপজার শেলটারে এভারগ্রিন অনিয়ম করে চলছে। তাই এ ঘটনায় বেপজা দায়ী।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, লোকমুখে একজন মারা যাওয়ার কথা শুনছি। কেউ মারা গেছেন কিনা, এখনো সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com