বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছাড়িয়েছে বৈশ্বিক গড়কে
প্রকাশ : ০৮-০৭-২০২৫ ১২:১৭

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের নারী ও পুরুষ উভয়ের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি (এসডব্লিউওপি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেখানে পৃথিবীজুড়ে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর, সেখানে বাংলাদেশে তা ৭৪ বছর। একইভাবে, নারীদের বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭৬ বছর হলেও বাংলাদেশে তা ৭৭ বছর।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়ে আছে ১৭ কোটি ৫৭ লাখে; যার অর্ধেকই নারী।
এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম (১৫-৬৪ বছর বয়সী)। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী (যাদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৩০ লাখ), এবং ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি; যা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যাতে দেশটি তার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাত শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি; যা প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। এই সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে যাওয়া বাংলাদেশের বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, ‘আসল সংকট জন্মহার নিয়ে নয়, বরং সংকটটি হলো প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়ে মানুষের, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অভাব। তার মতে, বাংলাদেশের প্রজনন হার (টিএফআর) দুই দশমিক এক হলেও, নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পদ্ধতিগত বাধার কারণে মানুষ তাদের ইচ্ছানুযায়ী সন্তান নিতে পারছে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে যে, দেশের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয় এবং শিশুদের যত্নআত্তির পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে অনেক পরিবার সন্তান নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে অথবা সন্তান নিচ্ছে না। এ ছাড়া, সামাজিক প্রথা ও বৈষম্যের কারণে মেয়েদের ওপর অল্প বয়সে বিয়ে এবং মা হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। নারীদের অবৈতনিক কাজের বোঝা, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাও নারীদের প্রজনন সিদ্ধান্তে বাধা সৃষ্টি করছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির শূন্য দশমিক সাত শতাংশ থেকে বরাদ্দ বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশে এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশে উন্নীত করা, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার উন্নতি, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ধরে রাখা। এ ছাড়া, সমন্বিত যৌনশিক্ষা, সাশ্রয়ী আবাসন, সবেতন মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং নারীর অবৈতনিক কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। ইউএনএফপিএ মনে করে, এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগানোর প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর ডেমোগ্রাফিক ডেটা অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার সাত শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হওয়া এবং বয়স্কদের যত্ন ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশ।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com