আশ্রমে জন্ম নেওয়া নির্মাতা শিন সাং-হুনের রহস্যজনক মৃত্যু
প্রকাশ : ২৭-১০-২০২৫ ১৭:০৭
ছবি : সংগৃহীত
বিনোদন ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতা শিন সাং-হুন আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। কোরিয়ান সংবাদমাধ্যম ওএসইএন জানিয়েছে, তার মৃত্যু ঘটে চলতি বছরের মে মাসে, তবে বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। পরিবারের কেউ খুঁজে না পাওয়ায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ‘নো-রিলেটিভ বুরিয়াল’ হিসেবে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর ঘটনায় কোনো আত্মহত্যার নোট পাওয়া যায়নি এবং শিনের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। এক বন্ধুর সন্দেহ থেকেই মৃত্যুর বিষয়টি সামনে আসে। বেশ কিছুদিন যোগাযোগ না পেয়ে তিনি শিনের বাসায় গেলে নির্মাতাকে মৃত অবস্থায় পান।
শিন সাং-হুনের জীবন ছিল সিনেমার গল্পের মতোই নাটকীয়। এক অনাথ আশ্রমে জন্ম নেওয়ার পর দত্তক সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু তার দত্তক মা ছিলেন জুয়ায় আসক্ত, যার কারণে পরিবারের ওপর নেমে আসে ঋণের বোঝা। শিন নিজেই পরিশোধ করেন প্রায় ১৬ কোটি কোরিয়ান উওন ঋণ। এরপর তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় দত্তক সম্পর্কের ইতি টানেন। অতীতের কঠিন সময় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেও কখনো তিক্ত হননি শিন। বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও পরিশ্রমী।
২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে শিন বলেছিলেন, যদি আপনি নিয়মিত বাণিজ্যিক ছবি না বানান, পরিচালক হিসেবে টিকে থাকা খুবই কঠিন। ছোট ও স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অবস্থা আরো করুণ-তারা শুধু সেটা প্রকাশ্যে বলে না। যতদিন আপনি সিনেমা বানাতে পারবেন না, প্রতিদিনই মনে হবে যুদ্ধ চলছে।
চলচ্চিত্রের কাজ না থাকলে জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি কাজ করতেন খণ্ডকালীন শ্রমিক হিসেবে— প্যাকেট বহন, ট্রাক আনলোড কিংবা ডেলিভারি সার্ভিসে। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একদিন এমন কাজ করে বুঝেছিলাম কত কষ্টের জীবন এটা। সারা শরীর ব্যথায় ভরে যেত। তখনো মনে হয়েছিল, হয়তো আমাকে পরিচালকের পথেই এগোতে হবে।
২০০২ সালে গায়ক হিসেবে বিনোদনজগতে পা রাখেন শিন সাং-হুন। এরপর ছোট ছোট অভিনয়ের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। ধীরে ধীরে মনোনিবেশ করেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার চলচ্চিত্র ‘জাজাংমিয়ন থ্যাঙ্ক ইউ’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা পায়। ছবিটি সপ্তম হলিউড ব্লুবার্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতে। পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশে ৮০টিরও বেশি পুরস্কারে সম্মানিত হয় এই সিনেমা। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেন ‘আন্ডারএজ’ (২০২৪) এবং ‘গড’স চয়েস’ (২০২৫)—যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। মৃত্যুর সময় তিনি কাজ করছিলেন ‘আন্ডারএজ ২’ ছবির পরিকল্পনায়, যা ২০২৫ সালে মুক্তির কথা ছিল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com