একীভূত করতে ৫ ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ, যা জানালেন গভর্নর
প্রকাশ : ০৬-১১-২০২৫ ১১:৩৮
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ব্যাংকগুলোর সাময়িক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রশাসকদের সহায়তার জন্য একটি করে দলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংক পাঁচটির (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম) চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ব্যাংক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা আনা, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে 'রেজোল্যুশন' বা সমাধান প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের এই বড় ধরনের ঝাঁকুনির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক পাঁচটির চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে, 'ব্যাংক রেজোল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হলো।
ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক পাঁচটিকে 'অকার্যকর' ঘোষণা করা হয়েছে।
গভর্নর জানান, এই প্রশাসকদের চারটি মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সচল রাখা এবং বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন, রেমিট্যান্স ও এলসি নিষ্পত্তি যেন নির্বিঘ্নে চলে তা নিশ্চিত করা; তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) অবকাঠামো একীভূত ও কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা; জনবল পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পুনর্গঠন করা এবং একই এলাকায় অবস্থিত একাধিক শাখা যৌক্তিকভাবে একীভূত করা।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠে একটি টেকসই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা।'
এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে 'সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক' নামে নতুন একটি শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শিগগিরই যাত্রা শুরু করবে। নতুন ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হলেও, এটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও পর্ষদের অধীনে পরিচালিত হবে।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি যোগ করেন, এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি ১০ টাকার মোট চার হাজার কোটি শেয়ার)।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রস্তুত করেছেন, যা গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষ হলেই তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর মনসুর বলেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা সম্ভবত চলতি মাসের (নভেম্বর) শেষ নাগাদ তাদের টাকা ফেরত পেতে শুরু করবেন। তিনি বলেন, নতুন ব্যাংকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হওয়ায় আমানতকারীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।
যাদের আমানত দুই লাখ টাকা বা তার কম, তারা শিগগিরই সম্পূর্ণ অর্থ তুলতে পারবেন। এর বেশি আমানতের ক্ষেত্রে, ধাপে ধাপে অর্থ উত্তোলনের একটি ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা পরে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
গভর্নর বলেন, এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৭৫ লাখেরও বেশি আমানতকারীর তহবিল সুরক্ষিত থাকবে। এই প্রক্রিয়াটি জনগণ, দেশ এবং আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য। এর সফল বাস্তবায়ন পরবর্তী সরকারের জন্য উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক স্থিতিশীলতা আনবে এবং অর্থনীতিতে আস্থা পুনর্নির্মাণে সহায়তা করবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com