এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি, অচলাবস্থায় দেশের বাণিজ্য
প্রকাশ : ২৯-০৬-২০২৫ ১২:৩১

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। শনিবার (২৮ জুন) এনবিআরসহ দেশের সব শুল্ক-কর কার্যালয়ে দিনভর পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। রবিবারও (২৯ জুন) রাজধানীসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি চলছে।
তবে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি শনিবারের তুলনায় কম দেখা গেছে। প্রধান ফটকে প্রবেশেও শিথিলতা দেখা গেছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মকর্তারা ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা আজ অবস্থান নিলেও তাদের সংখ্যা শনিবারের তুলনায় কম। আজ প্রধান ফটকের ভেতরের বটতলায় কর্মকর্তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দিতে বলা হয়েছে। তাদের অফিস সময় সকাল ৯টায়। এখনো কেউ কেউ আসছেন। পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করতে দিচ্ছি।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা আন্দোলনে যোগ দেবেন। শনিবারও বিভিন্ন শুল্ক-কর কার্যালয় থেকে মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কাজ হয়নি। ফলে এসব স্টেশন থেকে শুল্ক-কর আদায় কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শনিবার দুপুরে ঘোষণা দিয়েছে, রবিবারও ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি চলবে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। তাদের শর্ত হলো, আলোচনার আগে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে অপসারণ করতে হবে। অভিযোগ, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতের চলমান সংস্কারে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপেক্ষা করছেন। উল্টো আন্দোলনকারীদের দমন-নিপীড়ন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা সতর্ক করেছেন, টানা শাটডাউন চলতে থাকলে দেশের রপ্তানি শিল্প ধসের মুখে পড়বে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকরা দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে ইতোমধ্যেই কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার একটিও রপ্তানি কনটেইনার বন্দরে ঢোকেনি। ইউটিলিটি পারমিশন (ইউপি), রপ্তানি বিল দাখিল, চালান অনুমোদনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রাকগুলো ডিপোর বাইরে আটকে রয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিসিআই, বিজিএপিএমইএ, লেদার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইসিসি বাংলাদেশ, এফবিসিসিআইসহ অন্তত ১২টি ব্যবসায়ী সংগঠন একযোগে এনবিআরের অচলাবস্থার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমাদের শীতকালীন রপ্তানির অর্ডারগুলো ঝুঁকির মুখে। বায়াররা অন্য দেশে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এই অচলাবস্থা দেশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা বুঝি এনবিআর কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কিন্তু এভাবে পুরো অর্থনীতিকে জিম্মি করা সমাধান নয়। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসা।
গত ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অধ্যাদেশে এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হয়। এতে দুই বিভাগের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করবে’— এই কথার মারপ্যাঁচে এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য কায়েমের পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা সুপারিশ করেছিলাম— দুই বিভাগের প্রধান হবেন এনবিআর থেকেই। কিন্তু অধ্যাদেশে সে জায়গা থেকে সরে আসা হয়েছে; যা কর্মকর্তাদের ভীষণভাবে হতাশ করেছে।
টানা শাটডাউনে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি রপ্তানির বিলম্বে ভেঙে পড়ছে শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি-রপ্তানির অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ সমস্ত সামষ্টিক অর্থনীতি মারাত্মক চাপে পড়বে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com