weather ২৯.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৪% , রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরু-খাসির মাংসের ক্রেতা কম, স্বস্তি মাছ-মুরগিতে

প্রকাশ : ২৭-০৬-২০২৫ ১২:২২

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও রাজধানীর বাজারে এখনো কোরবানির মাংসের রেশ রয়ে গেছে। ফলে গরু-খাসির মাংসের দোকানগুলোতে নেই তেমন ক্রেতার ভিড়। দামও এখনো ঈদের আগের জায়গায় রয়ে গেছে। 

অন্যদিকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম আরো কমেছে। মাছের বাজারেও রয়েছে স্বস্তির চিত্র। বর্ষা মৌসুমে ভরপুর সবজির বাজার। দরদামও নিয়ন্ত্রণে। সবমিলিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা মাংসের পরিবর্তে মাছ-মুরগি ও ডিমের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।

শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি আগের তুলনায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়; যা ঈদের আগেও ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকা কেজিতে। লাল লেয়ার ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ২৪০ এবং ২৩০ টাকা দরে। দেশি মুরগির দাম এখনো তুলনামূলক বেশি, কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। হাঁস বিক্রি হচ্ছে জাতভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা প্রতি পিস দরে।

এ ছাড়া আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে, খাসি এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার টাকা কেজি। তবে বিক্রেতারা বলছেন, এই দামে কেউ আসছে না। ঈদের পর যাদের ঘরে কোরবানির মাংস আছে, তারা নতুন করে বাজার করছেন না।

ডিমের দামেও ঈদের পর থেকে ক্রমাগত কমতির ধারা চলছে। পাইকারি বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় আর খুচরা পর্যায়ে এসব ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়, যেখানে কয়েক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল ১৩৫–১৪০ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানগুলোতে এখনো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের সময় মাছের বাজারে যে খরা ছিল, এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন রুই, কাতল, পাবদা, চিংড়ি, টেংরা, শিংসহ সবধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সরবরাহ বেশি থাকায় দামেও নেই বড় কোনো ঊর্ধ্বগতি।

বড় আকারের রুই ও কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০–৭০০ টাকা, শিং ৪০০–৪৫০ টাকা এবং কৈ ২০০–২২০ টাকায়। এ ছাড়া সাধারণ তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। দেশি জাতের শিং ও কৈ মাছ এখনো দুষ্প্রাপ্য, যার দর যথাক্রমে এক হাজার ২০০ ও এক হাজার টাকা কেজি।

কোরবানির ঈদের পর প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম বাড়তি রয়েছে। এই সময়ে বেশির ভাগ মিনিকেট চালের দাম কেজিতে পাঁচ–ছয় টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে মোটা এবং মাঝারি চালের দামও কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়েছে।

বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল রয়েছে। যেমন ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর, রসিদ, মোজাম্মেল প্রভৃতি। এর মধ্যে মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম বেশি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার খুচরা দোকানগুলোতে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রসিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এসব চালের দাম ছিল ৭৫-৭৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। অন্যদিকে মোজাম্মেল মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা কেজি; যা ঈদের আগে ৮০ টাকার আশপাশে ছিল।

এদিকে সরু চালের দাম বাড়ার প্রভাবে মোটা এবং মাঝারি চালের দামও কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়েছে। অন্তত তিনটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। এটি ৫৫-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের মাঝারি মানের চালের দামও কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণত মোটা চাল ৫০ টাকার আশপাশে ও মাঝারি চাল ৫৫-৫৮ টাকার মধ্যে থাকে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন বাজারদরের তথ্যেও দেখা যায়, চালের দাম বেড়েছে। সংস্থাটির হিসাবে, গত এক সপ্তাহে সরু চালের দাম কেজিতে তিন টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।

আজকে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং গাজর ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, শসা ৩৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমের সবজি ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙা  ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৫০ টাকা, কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ২০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী সুমনা বেগম বলেন, সবজির দাম স্বাভাবিক রয়েছে। মাছের দামও আগের মতোই চাচ্ছে। সব ধরনের মুরগী ও ডিমের দাম কমেছে। এই দাম যদি থাকে, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে।

রামপুরা বাজারে গৃহিণী নাহিদা সুলতানা বলেন, ঈদের পর এখন এমনিতেই গরুর মাংস খেতে ইচ্ছা করছে না, আবার দামও অনেক বেশি। আজ দেখলাম ব্রয়লারের দাম একটু কমেছে। দুই কেজি নিয়ে যাচ্ছি, রান্নাও সহজ, খরচও ম্যানেজেবল।

তিনি আরো বলেন, দেখলাম মাছও তুলনামূলক সস্তা, তাজাও। পাবদা আর তেলাপিয়া নিলাম। বাচ্চারাও মাছ পছন্দ করে, রান্নাতেও সময় কম লাগে।

ডিমের দাম প্রসঙ্গে খিলগাঁওয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, বাসায় ডিম এখন প্রায় প্রতিদিনই লাগে। আগের চেয়ে ১৫–২০ টাকা কমে পাচ্ছি বলে কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে খুচরায় এখনো বেশি রাখছে, সেটিও ঠিক নয়।

মগবাজারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি বিক্রেতা মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই মুরগির বিক্রি বাড়ছে। মানুষ এখন হালকা খাবার খাচ্ছে, কোরবানির মাংস খেয়ে সবাই ক্লান্ত। ব্রয়লারের কেজি পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমেছে। বিক্রি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু লাভ খুব একটা নেই, দাম কম থাকায় মার্জিনও কম।

তিনি আরো বলেন, বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদাও বাড়ছে। তবে দেশি মুরগি অনেক দাম, তাই হাত কম যাচ্ছে ওদিকে।

মালিবাগে মাছ বিক্রেতা মো. কাওছার মিয়া বলেন, ঈদের সময় মাছ কেউ কিনত না, দোকান একেবারে ফাঁকা ছিল। এখন আবার বাজারে লোকজন আসছে, মাছও ভালো যাচ্ছে। রুই, কাতল, পাবদা এসব সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দাম খুব একটা বাড়েনি। মাছ যেমন আসছে প্রচুর, তেমনি মানুষও মাছ খেতে আগ্রহী হচ্ছে। যারা কোরবানি দেননি বা কম দিয়েছে, তারা আবার মাছ-মুরগিতেই ফিরে গেছে। এখন দিনে ১৫–২০ কেজি রুই-কাতল বিক্রি হচ্ছে, আগের তুলনায় দ্বিগুণ বলা যায়।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

জুলাই সনদ প্রস্তুত নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর : আলী রিয়াজ জুলাই সনদ প্রস্তুত নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর : আলী রিয়াজ হাজারীবাগে ট্যাংক পরিষ্কারের সময় বিস্ফোরণ, বাবা-মেয়েসহ চারজন দগ্ধ হাজারীবাগে ট্যাংক পরিষ্কারের সময় বিস্ফোরণ, বাবা-মেয়েসহ চারজন দগ্ধ এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি, অচলাবস্থায় দেশের বাণিজ্য এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি, অচলাবস্থায় দেশের বাণিজ্য ইরান কয়েক মাসের মধ্যে ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে: আইএইএ প্রধান ইরান কয়েক মাসের মধ্যে ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে: আইএইএ প্রধান রাজধানীতে মধ্যরাতের সড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ রাজধানীতে মধ্যরাতের সড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ৫