weather ২৭.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৩% , শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চড়া বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তি

প্রকাশ : ০৫-০৯-২০২৫ ১৪:৫৬

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্তমানে রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; যা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে সবজি, মাছ, মাংস ও মুরগির মতো খাদ্যপণ্যগুলোর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। তিন মাস ধরে বাজারে সবজির মূল্য স্বাভাবিক হয়নি; টমেটো, বেগুন, সিম, বরবটি থেকে শুরু করে কাঁচামরিচ পর্যন্ত অনেক সবজির দাম ৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। এদিকে মাছের মধ্যে ইলিশের মৌসুম প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় দাম আকাশছোঁয়া। একইভাবে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসের দামও ক্রেতাদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

দাম বাড়ার পেছনে বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবের দাবি থাকলেও বৃষ্টির অব্যাহত না থাকা সত্ত্বেও দাম কমার নাম নেয় না, যা পাইকারি ব্যবসায়ীদের একরকম সিন্ডিকেট ও দামের মনিপুলেশনের আশঙ্কা উসকে দিয়েছে। ক্রেতারা ক্রয়ে সীমাবদ্ধতা আনতে বাধ্য হচ্ছেন এবং আধা কেজি করে সবজি কেনার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি তৎপরতার অভাব, ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের থেকে অনেক বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

আজকের বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৮০ টাকা, প্রতি কজি পেঁপে ৩০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া, প্রতিকেজি বরবটি ১০০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শাসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, কঁচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা, কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ৭০০–৯০০ গ্রামের ইলিশ মিলছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতিকেজি জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৬০০–৮০০ টাকায়।

প্রতিকেজি রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০–৩৬০ টাকায়, শিং মাছ ৪০০–৫০০ টাকায়, পাবদা মিলছে ৫০০–৬০০ টাকায়। এ ছাড়া পাঙাশ, তেলাপিয়া ও সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে ২২০–২৬০ টাকায়। ছোট মাছের মধ্যে কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ি ও বাচা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা প্রতিকেজি।

অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭৫ টাকায়। কক মুরগি ৩১০, মোরগ ৩৩০ টাকায়। লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি মুরগি কিনতে কেজিপ্রতি খরচ করতে হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

‎বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি ও পাকিস্তানি মুরগি কেজিপ্রতি ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বড় রুই-কাতল মাছ ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতি কেজি ইলিশ বিভিন্ন সাইজ অনুযায়ী দুই ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। লাল ডিম ডজনপ্রতি ১৪৪ টাকা, হালি ৪৮ টাকা। গত সপ্তাহে লাল ডিমের দাম ছিল ১৫০ টাকা। সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৪৫ থেকে বেড়ে ১৫৫ টাকায় উঠেছে। ভারতীয় মসুর ১০০ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। ভাঙা ডাল ১০৫–১১০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১৫০–১৬০ টাকা, অন্য মুগ ১৪০–১৪৫ টাকা, খেসারি ১১০–১১২ টাকা। ছোলা ১০০ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা, বুট ডাল ১২০–১২৫ টাকা।

সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে বেড়ে ১৮৫–১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সুপার তেল লিটারপ্রতি ১৭০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। পোলাও চাল কেজিপ্রতি ১২৫–১৩০ টাকা, মিনিকেট ৭৮–৮০ টাকা, আটাশ (২৮) ও পায়জাম চাল ৬৫ টাকা।

মসলার দামে কিছুটা ওঠানামা দেখা গেছে। গোলমরিচ কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা, জিরা ৬৫০ টাকা, এলাচ চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার ২০০ টাকা। লবঙ্গ এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৬০০ টাকা, তেজপাতা ১৮০–২০০ টাকা। গুঁড়া মরিচ ও হলুদ কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা।

শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকায় উঠেছে। তবে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামে স্বস্তি এসেছে। চায়না আদা ১৯০ থেকে কমে ১৬০ টাকা, দেশি আদা ১৪০ টাকা। চায়না রসুন ১৩০ টাকা, দেশি রসুন ১১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, হাইব্রিড ৭৫ টাকা।

শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজ দীর্ঘদিন ধরে সবজির অতিরিক্ত দাম যাচ্ছে। ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে বলতে গেলে বাজারে কোনো সবজি নেই। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এত দামে সবজি কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেই এক-একটা আইটেমের সবজি আধা কেজি করে কিনলাম। এতদিন ধরে সবজির বাজার বাড়তি যাচ্ছে অথচ বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, সবজির দাম বাড়তি থাকায় আমাদেরও ব্যবসা কমে গেছে। যে ক্রেতা আগে এক কেজি করে সবজি কিনতেন, তিনি এখন আধা কেজি করে সবজি কিনছেন। বলতে গেলে আধা কেজি করে সবজি কেনা ক্রেতার সংখ্যায় এখন বেশি। আগে যেখানে সারা দিনে এক আইটেম সবজি ২০ কেজি বিক্রি করতাম, এখন সেই সবজি সারাদিনে বিক্রি হয় পাঁচ কেজি। ফলে আমাদের ব্যবসাও আগের চেয়ে কমে গেছে।

মগবাজারের সবজি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, আর কিছুদিন সবজির দাম বাড়তি থাকবে। কারণ, এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তি থাকবে। কারণ, চাহিদার তুলনায় এখন বাজারে সবজির সরবরাহ অনেকটাই কম।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রুবেল হাসান বলেন, এ বছর মাছ আসছে কম। জেলেরা সমুদ্রে মাছ পাচ্ছে না। ফলে সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বেশি।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের বিক্রেতা শফিউজ্জামান বলেন, সবাই বড় ইলিশ খোঁজে, কিন্তু বড় ইলিশের আকাল। ছোট ও মাঝারি ইলিশ বাজারে ভরপুর। আরেক বিক্রেতার দাবি, মৌসুম শেষের দিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও আকারভেদে কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।

কাজীপাড়ার ফুটপাতের অস্থায়ী বাজার থেকে মাছ কিনছিলেন কলেজশিক্ষক নুরুল হাসান। তিনি বলেন, মাছের ফিডের দাম কমলেও চাষের মাছের দাম বাড়তি। ২০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। সরকার চাইলে চাষের মাছের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে।

কথা হয় নির্মাণশ্রমিক স্বপন সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইলিশ এখন আর গরিবের নাগালের মধ্যে নেই। একটা মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনতে গেলে দুই দিনের কামাই চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে জাটকা কিনি। কিন্তু জাটকা খেয়ে ইলিশের আসল স্বাদ মেলে না।

কৃষি মার্কেটে জাহিদুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা মাছ মাংসের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি শুক্রবার বাজার করতে এসে দেখি ৭০০ টাকায় গরুর মাংস নেই। খাসির মাংস তো ছোঁয়াই যায় না। বড় মাছ কিনতে যাবো সেখানে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে এক হাজার দাম চেয়ে বসে। আমরা কোন দিকে যাবো, কী কিনে খাবো। আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। ইচ্ছামতো চাইলেই নিত্যপণ্যের দাম রাখা যাচ্ছে। সরকারও মনিটরিং না করে তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের এমন সিন্ডিকেট থেকে রক্ষা করবে কে?‎

‎কৃষি মার্কেটের মাংস ব্যবসায়ী জহিরুল বলেন, বাজারে চাহিদা থাকায় সব মাংসের দাম বেশি। এখন আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করব। শুক্রবার এলে ক্রেতাদের ভিড় থাকায় আমাদের মাংস শেষ হয়ে যায়। এরপরও তাদের অভিযোগ, আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। এখনতো ৭০০-৮০০ গরুর মাংসের দাম। কয়েক দিন পর এক হাজার টাকায় চলে যাবে। খাসির মাংস দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। তখন তো আমরা ক্রেতাদের ভয়ে দোকান ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বাজারদর বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত কাজ করছি, এটি নতুন কিছু নয়। আপনারা জানেন, আমাদের লোকবল সংকট। এ ছাড়া হঠাৎ যেসব পণ্যের দাম বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে আমরা চিঠি দিয়ে অভিযান পরিচালনার তাগিদ করি৷

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, আসলে ভোক্তারা নানাভাবে ঠকছেন। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। মূলত সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই। বেপারী ফরিয়াদের খপ্পরে পড়ে কিছু কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলোকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ রইল।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধ করা যাচ্ছে না রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ হাতকড়া-শিকল পরিয়ে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র হাতকড়া-শিকল পরিয়ে আরো ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক সংকট দ্রুত শেষ করতে ৪ হাজার বিজ্ঞানীর বিবৃতি গাজায় মানবিক সংকট দ্রুত শেষ করতে ৪ হাজার বিজ্ঞানীর বিবৃতি চড়া বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তি চড়া বাজারে ক্রেতাদের অস্বস্তি