মিনিকেট চালের দাম কমেছে, সবজির দামে অস্বস্তি
প্রকাশ : ০৯-০৫-২০২৫ ১২:২৩

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে আসছে নতুন চাল। ফলে দাম কমেছে সরু তথা মিনিকেট চালের। গত দুই সপ্তাহে প্রকারভেদে এই চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছে। অন্যদিকে, সরবরাহ কমে যাওয়ায় সবজির দাম চড়া। আর মজুদদারদের কারসাজিতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। মাছ ও মাংসের দাম অপরিবর্তিতই আছে।
বিক্রেতারা জানান, মিনিকেট আসায় বাজারে চালের দাম কমেছে। মিনিকেট হিসেবে পরিচিত ছাঁটাই করা চাল মূলত বোরো ধান থেকে তৈরি করা হয়। এখন এই ধানের মৌসুম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডায়মন্ড, মঞ্জুর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই চালের কেজি ৮৮ থেকে ৯০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে, রোজার ঈদের পর বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। কমদামি সবজি হিসেবে পরিচিত প্রতি কেজি পেঁপে এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে বেশিরভাগ সবজির দামই ৮০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দামে হেরফের না হলেও ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে পাঁচ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। প্রতিকেজি পটোল ৭০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, টমেটো মানভেদে ৪০-৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৭০-৯০ টাকা, ঝিঙা প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা প্রতিকেজি ৮০ টাকা, কচুরমুখি প্রতিকেজি ১০০-১২০ টাকা, প্রতিকেজি মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। প্রতিকেজি চিচিঙা ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু ২৫-৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২২০-২৪০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০-১১৫ টাকা, দেশি চিকন মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে ডিমের দাম বাড়লেও মুরগির দাম স্থিতিশীল। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৭০-১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগি মানভেদে ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা ও শিং এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৫০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
পল্লবীর মুসলিম বাজারের সবজি বিক্রেতা হাসান আলী বলেন, এখন সবজির সরবরাহ খুব কম। পাইকারি বাজারেও দাম বেশি। বর্ষা শুরু হলে দাম কিছুটা কমে যাবে।
কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস মিয়া বলেন, পেঁপে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য বেশিরভাগ সবজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমে আসবে।
মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে ডিম ব্যবসায়ী সবুজ আহমেদ বলেন, দাম একটু বেশি, আমরা বেশি দামে ডিম কিনছি এখন। ওই বাজারেই ডিম কিনতে আসা গৃহিণী জারা আমিন বলেন, অনেক দিন ধরে শুনছি ডিম বাজারে আসবে না। বন্ধ হয়ে যাবে। দুই সপ্তাহ আগে ডিম কিনেছি। তখন ১৩০ টাকা ডজন পড়েছে। আজ কিনলাম ১৪৫ টাকায়।
মালিবাগ বাজারে মাহফুজ আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি রাখছে। ক্রেতারা অসহায়। দুনিয়ার যেখানে যুদ্ধ হোক বাংলাদেশ পণ্যের দাম বাড়ে। ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধ লেগে গেলেও এর ব্যতিক্রম হবে না।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আল-আমিন বলেন, তেলের দাম আগে থেকেই বাড়তি। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সবজি। এর সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কোনো কিছুর দাম একবার বাড়তে শুরু করলে আর থামতে চায় না।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভালো উৎপাদনের পরও আমরা দেখতে পাই বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে আলুর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা গেছে। এখন অবশ্য আলু কম দামে মিলছে। এখন পেঁয়াজে এমনটি হচ্ছে। ভালো উৎপাদনের পরও মৌসুমে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
তাই কেবল উৎপাদন নয়, বাজারের অনিয়মগুলোতেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে, কৃষিপণ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হবে আগে। সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে, কোথায় কত মজুদ হচ্ছে, সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রয়েছে কিনা, ক্রয়মূল্য কত, বিক্রয় করা হচ্ছে কত। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। নজরদারি জোরদার করতে হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com