রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে সুখবর নেই
প্রকাশ : ২৫-০৭-২০২৫ ১৪:১৮

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের মাঝে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবজির মৌসুম শেষ, লাগাতার বৃষ্টি এবং সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে সবজির দাম বেড়ে যায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত, যদিও বর্তমানে তা কিছুটা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে স্থিত হয়েছে।
মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই; ইলিশের মৌসুম চললেও বড় ইলিশের সংকট এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে দাম এখনো নাগালের বাইরে। গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের প্রধান ভরসা চাল ও আলুর দামও ঊর্ধ্বমুখী, যেখানে প্রতি বস্তা চালের দাম এক বছরে বেড়েছে প্রায় এক হাজার ১০০ টাকা। ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০–৩০ টাকা, পাশাপাশি গরু ও খাসির মাংসের দামও রয়েছে চড়া অবস্থায়।
ডিম, মাছ, মাংস ও তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জলবায়ু ও মৌসুমি প্রভাবের কথা বললেও সাধারণ ভোক্তারা বাজার মনিটরিংয়ের অভাব এবং করপোরেট ব্যবসায়ীদের আধিপত্যকেই দুষছেন। এ অবস্থায় সরকার কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক হ্রাস করলেও বাস্তবভিত্তিক কার্যকর কোনো নিয়ন্ত্রণ এখনো দৃশ্যমান নয়। ফলে ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের বাজারে স্বস্তি তো নেই-ই, বরং দুশ্চিন্তা আরও বেড়েই চলেছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ করা গেছে।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি গাঁজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৭০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাক, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি হালি কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৪৯, কচু প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি কক মুরগি ৩১০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি ২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারগুলোতে ইলিশের কেজি আকারভেদে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের (আকারভেদে) কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাষের পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মলার কেজি ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
মগবাজার বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী হায়দার আলী বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত। বাজারে বেশিরভাগ সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কী কারণে হঠাৎ সবজির দাম এমন বাড়তি, সেটি সমাধানে বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ কখনো দেখি না। বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে।
মহাখালীর সবজি বিক্রেতা চাঁদ মিয়া বলেন, সবজির দাম বাড়তে থাকার মূল কারণ হচ্ছে বেশিরভাগ সবজির এখন মৌসুম শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রায় বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টিতে সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব মিলিয়ে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম এ কারণেই কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও সব সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারের সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। যে কারণে সবজির দাম বাড়তি। আসলে পাইকারি বাজারে তুলনামূলক কম দাম থাকলেও এখান থেকে যারা নিয়ে গিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন ছোট খুচরা বাজারে বিক্রি করে তারা আরো বেশি দাম বাড়িয়ে দেয়। তবে কিছুদিনের বৃষ্টি, সবজির মৌসুম অনেকগুলো শেষ হওয়ার কারণে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। নতুন কোনো সবজি উঠলে, সরবরাহ বাড়লে আবারো সবজির দাম কমে আসবে।
ইলিশের দাম বিষয়ে পেয়ারাবাগ বাজারে বিক্রেতা মোক্তার হোসেন বলেন, বাজারে মাছ কম মনে হচ্ছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর ফুল সিজনে ইলিশের দাম আরো কমবে।
কারওয়ান বাজারে পুলিশ সদস্য আব্দুল হাকিম বলেন, কয়েক দোকানে দাম জিজ্ঞেস করেছি। মাছ আর টাকায় মিলছে না। পাঙাশ আর তেলাপিয়া কিনে নিয়েছি।
একই বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল হাসান বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় অনেক জেলে সাগরে যেতে পারে না। কিন্তু আবহাওয়া ভালো হলে ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্ত দালাল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দাম অনেক বেশি। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শহরের মধ্যবিত্তরা জাটকা ইলিশও কিনতে পারবে না।
চালের দাম সম্পর্কে ঢাকার কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির এম এ আউয়াল তালুকদার বলেন, দাম বেড়েছে বস্তায় অন্তত এক হাজার টাকা। করপোরেট কোম্পানিগুলো বোরো মৌসুমে ধান মজুত শেষ করেছে। মিলারদের হাতে আগের মতো ধান-চাল নেই।
তিনি আরো বলেন, বড় কোম্পানিগুলোকে সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজারে ব্যবসার অনুমোদন দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। এখন চালের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। আগের মিলাররা কেজিতে দু-এক টাকা দাম বাড়াত। আর করপোরেট কোম্পানি দাম বাড়ায় কেজিতে ছয়-আট টাকা।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বাজারে এক কেজি পোলাওয়ের চাল আমরা বিক্রি করি ৮০ টাকা। আর করপোরেট কোম্পানি বিক্রি করে ১৪০ টাকায়। সরকার সুযোগ করে দিয়ে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
কারওয়ান কাজার কিচেন মার্কেটের বাহার ট্রেডের স্বত্বাধিকারী বলেন, পাইজাম চাল নেই। সরু চালের কেজি এখন ৮০ টাকা। তবে একটু ভালো মানের চিকন চালের বস্তা (৫০ কেজি) এখন চার হাজার টাকা। গত বছরে এটি দুই হাজার ৯০০ থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করতাম। বছরে বস্তায় বেড়েছে প্রায় এক হাজার ১০০ টাকা।
কিচেন মার্কেটের মতলব রাইস এজেন্সির মালিক বলেন, আগে করপোরেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মিলাররা সরকারের কথা মানতেন এবং খুব বেশি চালের দাম বাড়াতেন না। এখন করপোরেটকে ধরার কৌশল করতে হবে। চাল আমদানি করে, শুল্ক ছাড় দিয়ে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।
এদিকে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সম্পর্কে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের হামিদ স্টোরের তরুণ মুরাদ বলেন, সরকারি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করি। সরবরাহে ঘাটতিও নাই, ক্রেতাও কম।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com